Friday 28 June 2013


অস্তিত্ব
অভিষেক কবিরাজ
**********************

কাঁপিয়ে দাও আমার পৃথিবীটা
পায়ের তলার মটি সরে যাক
বুকে মৃত্যুভয় নিয়ে আমি চাপা থাকি ধ্বংস্তূপে 
যেটা বাস্তব কিন্তু পৃথিবীর অন্যরূপ ।
চোখের সামনে জমাট অন্ধকার
কোনো এক পাশ থেকে আসছে পচা গন্ধ 
শরীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে পিঁপড়ে পোকামাকর 
আলো খাদ্য জলহীন স্থানে এইভাবে পড়ে থাকি দিন কয়েক ।
তারপর,
কারো পায়ের শব্দে
কান শুনতে চাইবে কোনো সাহাজ্যের স্বর
চোখ দেখতে চাইবে কোনো  আলোর উৎস
মুখ বলতে চাইবে "আমি আছি  এখনো........" !!
তরপর হঠাৎ একদিন আলো দেখবে আমার দেহ,
স্বজনের সজল চোখে খুঁজবো ভালবাসা, স্নেহের আকুলতা ।
হাসপাতালের গাড়ীতে আমি চলে যাবো বেডে ,
তারপর কোথায় ?
আমি কি বেঁচে আছি ??

Thursday 27 June 2013

অনামি নায়িকা
                                              *  অভিষেক কবিরাজ


ময়ূরাক্ষী তোমার পাড়ে
কলসী কাঁকে সেই মেয়েটি,
আসতো যখন এলোচুলে
মাঠের আলে গুটিগুটি ।
মাটির কলসী জলে ভরে
ঝুলতো ঘাড়ে আলতো খোঁপা,
ভিজে শাড়ী হাঁটুর কাছে
শাড়ীর জলে ভিজতো দু পা ।
স্বামীর ঘরে ঠাঁই হয়নি
বাপ ভাইদের গলগ্রহ,
কালো মেয়ের মুখে তবু
ফুটছে হাসি অহরহ ।
সন্ধ্যা বেলা প্রদীপ হাতে
লাল পাড় সেই সাদা শাড়ী, 
ঠেকায় মাথা ঠাকুরতলায়
সন্ধ্যা দিয়ে ফেরে বাড়ী ।
মাথার বালিশ চোখের জলে
ভিজত প্রায় রোজ রাতেই,
ঘুম ভাঙতো রোজ সকলে
সূর্য ওঠার অনেক আগেই ।
দিন,মাস আর বছর অনেক
এইভাবেতে পেড়িয়ে গেছে,
ময়ূরাক্ষীর পাড়ে আসা 
সেই মেয়েটি হারিয়ে গেছে ।
এলোচুলে মাঠের আলে
কেউ আসেনা এই পথেতে ,
ভেজা শাড়ীর গড়ানো জল
আর পড়েনা এই মাঠেতে ।
সেই কালো দুঃখী মেয়ে 
আসতো সে আছে সাক্ষী,
এই মাঠ আর এই রাস্তা
বইছে আজো ময়ুরাক্ষী ।

রেল লাইনের উপর একটা লাশ

                                       অভিষেক কবিরাজ
*************************************************************

তিনটে কুড়ির বর্ধমান লোকাল চলে গেল আমার উপর দিয়ে ।

আষাঢ়ের এই অসহ্য গরমে আর ভুগতে হবে না ।
দুটো হাত আর ডান পা টা হাঁটুর নীচে আলাদা হয়ে গেছে শরীর থেকে ।
মাথা বহাল তবিয়তেই আছে,
মুখে যন্ত্রনার স্পষ্ট ছাপ
তবে সেটায় আবরন হয়েছে আমার লম্বা চুল ।
দেহটা ঘিরে জটলা
কৌতুহলি মুখগুলো ছিন্ন দেহটার ময়নাতদন্ত করছে ।
মুখে ফুটে উঠছে
সাইজ ছিলো মাইরি....
যাঃ পেন্টি পড়ে মরতে না গেলে ....
ইত্যাদি ইত্যাদি .......... !!
মৃত্যুর পরেও যে মানুষের শ্লীলতাহানি হয়
না মরলে জানা হতো না ।
সময় এগিয়ে যাচ্ছে
রক্তহীন ক্ষতে মাছি পিঁপড়ের আনাগোনা বাড়ছে ।
দিনের আলো অন্ধকারের রূপ নিল
ছিন্ন হাতের সোনার বালা  আংটি, কানের দুল,
কে বা কারা খুলে নিল সবার অলখ্যে
দেহটাকে বেওয়ারিশ করে ।
অনেক রাতে
সেটা বস্তাবন্দী হয়ে
রেলপথ ধরে চলে গেল লাশঘরে ।
মৃত বুকে শ্লীলতাহানির গ্লানি নিয়ে ।


প্রিয় বন্ধু * অভিষেক কবিরাজ
***************************************
                                   (বীরভূমের আঞ্চলিক ভাষায়)

সিদিনের কথা মুনে পড়ে ?
পড়ত্যে যেথুম ইসকুলেতে ,
টিফিন টায়িমে দাঁড়ায় থাকতুম,
ব্যালকুনির ঐ রেলিং ধরে তু অ্যাকদিকে আমি অ্যাকদিকে ।

তখন বুধয় কিলাস উয়ান ।

নীল প্যান আর সাদা জামায় তুর চিহারা পড়ছে মুনে ।
আমার কথা অ্যাখুনো ভাবিস ?
মুনে আছে ?
আমার চুল্যের মুঠি ধরে দু গালেতে মেরেছিলি ।
আমার চুল্যে তুর ছুয়াঁট আজো আমার মুনে আছে ।
সেইদিনেতে বেজেছিল্যো আজক্যে সেইট সুখের সিতি
ভাবি আমি সেইট যদি অ্যাখুন পেথুম ?

বো জামাই খেলথুম বিকেল বিলায়

আমার জামাই তু ই হতিস ।
মুনে আছে 
পুজা অ্যাকদিন বো হয়াতে খিলা ছেরে পালানছিলি ?
আজকে আমি অন্নো কারু
কিন্তু তুর নামট আজও লিখা আমার বুক্যের বাঁ পাশটতে ।

কালক্যে তুখে দেখলুম

এরিয়ামোরে ইকাই বস্যে ছিলি ।
ভাবলুম যেঁয়ে কথা বলি
পারলুম না
যদি চিনত্যে না পাড়িস !


রক্তের স্বাদ 
                        অভিষেক কবিরাজ
****************************************

বিকৃত কামনার শেষে
অর্ধনগ্ন দেহটার ছোট্ট একটা ময়না তদন্ত
দেহে স্পন্দন থাকলে সেটা থামিয়ে দেওয়া একমাত্র কাজ ।
নৃশংসতা এখানেই সবচেয়ে নিপূনতা দেখায় ।
ছিন্ন স্তনবৃন্ত .....
ঘাসের উপর বুকের শুকিয়ে যওয়া রক্ত ।
লিপস্টিক লাগা ঠোঁটে মানব দন্তের দংশন ।
এলোমেলো চুল নিথর মুখে রচনা করেছে অদ্ভুদ রহস্য ।
চীরদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়া মনটা
ঢাকা পড়ে সাদা একফালি কাপড়ে ,
মরে বাঁচা দেহটা
বেঁচে থাকলে বুঝতো উদার সমাজ কতোটা অনুদার ।
লাসটা বিক্রি হয় সমবেদনার ছাতার তলে ।
তাড়াতাড়ি 
লুন্ঠিত সম্মান হাতিয়ার করে জয়ী হয় একদল নীতিব্যবসায়ী ।
বিকৃত কামনা আবার জেগে ওঠে
আবার কোনো দেহের সন্ধানে ।


নগ্ন সত্য অভিষেক কবিরাজ
********************************************